যশোরে যৌতুকের দাবিতে মারধরের পর স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক নারী। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ওই নারী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে স্বামী, দেবর ও শাশুড়ির নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন তিনি। আদালত বাঘারপাড়া থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই নারীর আইনজীবী।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১৫ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর গ্রামের জামসের আলীর মেয়ে আনোয়ারা খাতুনের সাথে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ব্যবসার জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তরিকুল ইসলাম।
আরো পড়ুন=>> গত ১২ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬০ শতাংশ
আনোয়ারা খাতুন টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় তরিকুল, তার ভাই তৌহিদুল এবং মা হাফিজা খাতুন তার উপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করে সংসারে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও, সর্বশেষ ২৭ জুন একমাত্র সন্তানসহ আনোয়ারা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বামীর সাথে মীমাংসার চেষ্টা করেন।
শেষবার ১৬ জুলাই আনোয়ারা খাতুনের পিতার বাড়িতে দুই পরিবারের লোকজন মীমাংসায় বসেন। মীমাংসার পর আনোয়ারা খাতুন ও তার সন্তানকে নিয়ে মাইক্রোবাসে মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন তরিকুল, তার ভাই এবং মা। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুরের বিপুল ফারাজির ইটভাটার সামনে পৌঁছালে আনোয়ারাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় এবং তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
এসময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে ছেলেসহ ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তরিকুল ও তার স্বজনরা চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সুস্থ হয়ে থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। ফলে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
আদালত চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারা খাতুন বলেন, তার স্বামী রাজনীতির করে। তার অনেক প্রভাব। তারপরও তাকে এভাবে নির্যাতন চালাবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
আনোয়ারা খাতুনের আইনজীবী মোস্তফা হুমায়ুন কবির জানান, ভুক্তভোগী নারী তার স্বামী, দেবর এবং শাশুড়ির কাছে নির্যাতিত হয়ে বাঘারপাড়া থানায় গেলে থানা মামলা নেয়নি। এখন তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাঘারপাড়া থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, আমি থানায় নতুন এসেছি। আমি আসার আগে হয়তো ভুক্তভোগী নারী আদালতে আসতে পারেন। আমি যোগদানের পরে আমার জানামতে তিনি মামলা করার জন্য আসেননি।
আদালত যেহেতু নির্দেশ দিয়েছে মামলা গ্রহণের, নির্দেশের কাগজ আসলেই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপে গ্রহণ করবে।
আদালতে উপস্থিত বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য মর্জিনা খাতুন বলেন, এ ধরনের নির্যাতন নারীর জন্য অবমাননাকর। এই নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত যাতে আর কোন নারী এ ধরনের নির্যাতনের শিকার না হন।