পবিত্র কোরআন শরীফের গুরুত্বপূর্ণ সূরা ফাতিহা। কোরআনুল কারিমের ১১৪টি সূরার মধ্যে প্রথম সূরাটি হলো সূরাতুল ফাতিহা। সূরা ফাতিহা মক্কায় অবতীর্ণ। সূরা ফাতিহাকে ‘ফাতিহাতুল কোরআন’ বা কোরআনের শুরু বলে অভিহিত করা হয়।
সুরা ফাতিহার ফজিলত
একবার মহানবী (সা.) একদল সাহাবিকে একটি সামরিক অভিযানে পাঠালেন। দীর্ঘদিনের পথ। পথে সাহাবিরা একটি লোকালয় খুঁজে পেলেন। তাঁরা ভাবলেন, কিছুদিন এখানে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। লোকালয়ের মানুষ সাহাবিদের মোটেও ভালো চোখে দেখল না। তারা কোনো সাহায্য তো করলই না, তার ওপর খুবই রুক্ষ ও অমানবিক আচরণ করল। সাহাবিরা সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে এক রাতের বেশি থাকা ঠিক হবে না। কাল সূর্যোদয়ের আগেই রওনা দিতে হবে।
সেই রাতে লোকালয়ের গোত্রপ্রধানকে এক বিষাক্ত সাপে কামড় দিল। লোকালয়ের চিকিৎসকেরা হাজার চেষ্টা করেও বিষ নামাতে পারল না। বিষ নামানো না গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। এবার লোকজন বাধ্য হয়ে নবী (সা.)-এর সাহাবিদের কাছে এসে বলল, ‘আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে সাপের বিষ নামাতে জানে? আমাদের এক দলনেতাকে সাপে কামড় দিয়েছে।’
একজন সাহাবি বলে উঠলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছ থেকে কোনো ভালো আচরণ পাইনি, তবু চেষ্টা করে দেখতে পারি। যদি তিনি সুস্থ হন, তবে এর বিনিময় কী হবে?’
লোকালয়ের লোকেরা বলল, ‘যে আমাদের দলনেতাকে সুস্থ করতে পারবে, তার জন্য ৩০টি বকরি পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।’
সাহাবিরা রাজি হলেন। তারা দলনেতার পাশে গিয়ে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা শুরু করলেন: ‘সব প্রশংসা শুধু আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহ প্রতিপালন করেন। যিনি দয়াময় ও পরম দয়ালু। যিনি বিচার দিবসের মালিক।
আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই। আপনি আমাদের সরল সঠিক পথ দেখান। তাদের পথ, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তবে তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার শাস্তি বর্ষিত হয়েছে, যারা পথভ্রষ্ট। আমিন।’
সূরা ফাতিহা পাঠের গুরুত্ব
১. কোরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরা: হজরত আবু সাইদ আল-মুয়াল্লা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি একবার নামাজ আদায় করছিলাম। রাসূল (সা.) তখন আমাকে ডাকলেন, কিন্তু নামাজে থাকায় আমি তার ডাকের সাড়া দিতে পারিনি। পরে আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি নামাজে ছিলাম।”
রাসূল (সা.) বললেন, “আল্লাহ কি বলেননি, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের আহ্বান করেন।” (সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৪)
অতঃপর তিনি বলেন, “আমি কি তোমাকে কোরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরাটি শেখাবো না? (এটি হল) ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’, যার সাতটি বারবার পঠিতব্য আয়াত রয়েছে….” (বুখারী)
২. নামাজের স্তম্ভ: হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে তার নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করলো না, তার নামাজ বাতিল।” (বুখারী)
৩. কোরআনের মা: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন সূরাটি কোরআনের মা…” (তিরমিজি)
৪. রোগের আরোগ্য দানকারী : একবার রাসূল (সা.)-এর এক সাহাবী বিচ্ছুর দংশনে সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তখন বললেন,
“তুমি কীভাবে জানলে এটি রুকিয়া (আরোগ্য দানকারী)?” (বুখারী)
৫. আকাশ থেকে প্রেরিত আলো: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, “একবার জিবরাইল (আ.) রাসূল (সা.) এর কাছে থাকার সময় বিকট এক আওয়াজ হল। জিবরাইল (আ.) তখন তার মাথা উপরে তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটি আকাশের একটি দরজা কিন্তু এর আগে এটি কখনোই খোলা হয়নি।” এরপর সেই খোলা দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নিচে নেমে রাসূল (সা.) এর কাছে এলেন এবং বললেন, “আপনাকে প্রদত্ত দুইটি আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার আগে কোন নবীকেই দেওয়া হয়নি। এই গ্রন্থের সূচনা (সূরা ফাতিহা) ও সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ। কোন প্রকারে উপকার পাওয়া ছাড়া আপনি এগুলো থেকে একটি অক্ষরও পাঠ করবেন না।” (মুসলিম)
৬. বারবার পঠিতব্য আয়াত: কোরআন কারীমে বলা হয়েছে, “আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।” (সূরা হিজর, আয়াত: ৮৭) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরআনের অন্যান্য সূরার উপর সূরা ফাতিহার গুরুত্ব কীরূপ।
৭ অন্তরের আরোগ্য দানকারী: কোরআনের এই সূরার শেষের দিকে পথভ্রষ্টতা ও আল্লাহর অভিশাপ থেকে রক্ষার জন্য দোয়া করা হয়েছে। সচেতনভাবে কেউ তা পাঠ করলে সে তার হৃদয়কে পাপ থেকে দূরে রাখতে পারে।