‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’ ফিরে এলো আজ সেই মহরম মাহিনা…। আজ মহরমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা এক অসামান্য তাৎপর্যে উজ্জ্বল। ইবাদত-বন্দেগির জন্যও এ দিবস অতুলনীয়। সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার মর্মন্তুদ সকরুণ শোকগাথা এ দিবসকে গভীর কালো রেখায় উৎকীর্ণ করে রেখেছে।
৬১ হিজরি সালের এই দিনে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহিদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। মুসলমানদের কাছে বিগত বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে মহরমের দুটি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহরম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজ, (সহিহ মুসলিম)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তিনি আশুরার দিনে ইহুদিদের রোজা পালন করতে দেখলেন।
আরো পড়ুন=>> পর্যাপ্ত জলাশয় নেই, কালীগঞ্জে কমে গেছে পাটের চাষ
‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোনোদিন যে তোমরা রোজা পালন করছো? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন।
এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা পালন করলেন ও অন্যদের রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন।
(বুখারি ও মুসলিম)। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো, তিনি বললেন, আমি আশা করি আল্লাহর কাছে এটি বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে (মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ রোজা ছাড়া অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। আর তা হলো আশুরার রোজা ও রমজান মাসের রোজা।”
বুখারি ও মুসলিম। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজা পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, এটা তো এমন এক দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সম্মান করে থাকে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আগামী বছর এলে ইনশাআল্লাহ আমরা নবম তারিখে রোজা পালন করব।