চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুক্তার আলী (৪৮)-এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী। রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
অভিভাবকরা তাদের অভিযোগে বলেন, স্কুল চলাকালীন সময় শ্রেণি কক্ষের ভিতরে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে এসব অশ্লীল আচরণ করেন তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুক্তার আলী। বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা শিক্ষক মুক্তারের এমন লালসার শিকার হয়। তিনি শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রীদের গায়ে হাত দিতেন। এছাড়া একাকী পেলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আরো পড়ুন=>> মেহেরপুরে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় আহত ৫
নাম প্রকাশ না করে অভিভাবকরা আরও বলেন, শিক্ষক মুক্তারের ফাঁদে পড়ে, তার সঙ্গে অনেক ছাত্রীই ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য হয়। যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তাদের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে পাস করিয়ে দেয় এই শিক্ষক মুক্তার আলী। আর তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে, সেসব ছাত্রীদের ফেল করিয়ে দেয় এ মুক্তার আলী বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টি তার পরিবারে জানালে, অভিভাবকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, মুক্তার স্যার আমাদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। তিনি ক্লাসের মধ্যেই বিভিন্নভাবে গায়ে হাত দিতেন, ভাবতাম এটা তেমন কিছু না, কারণ শিক্ষক তো বাবার মতো। কিন্তু তিনি প্রতিদিনই আমাদের গায়ে, গালে, বুকে, পেটে হাত দিতেন, টেবিলের নিচে থেকে পা-এর মধ্যে পা নিয়ে চেপে ধরতেন, বলতেন আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে তোমার ভালো হবে, ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। ভয়ে মুখ খুলতাম না। তবে আর এই অপকর্ম সহ্য করতে না পেরে, আমি আমার পরিবারকে জানায়।
স্কুলের আরেক ছাত্রী বলেন, স্যারের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে প্রতিটি পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া হতো। একপর্যায়ে আমার দুই বান্ধবী স্যারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বিষয়টি মানসম্মানের ভয়ে তারা চেপে গেছেন। তার অপকর্মের কথা বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মচারীও জানেন। তবে সবাই তার ভয়ে কেউই মুখ খোলেন না।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মুক্তার স্যার ক্লাসে পড়ানোর সময় বিভিন্ন ইস্যু বের করে আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। আমরা এগুলো কাউকে বলতে পারি না। আমাদেরকে তিনি সবসময় ভয় দেখাতেন। একজন স্কুলের শিক্ষক হয়ে তার এমন আচরণের বিচার আমরা কোথায় পাব? এখনও স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল ম্যানেজিং কমিটি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই ধরনের খারাপ কাজ যদি প্রতিনিয়ত চলতে থাকে তাহলে আমরা কিভাবে পড়াশুনা করবো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন , শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বাবা-মা এবং সন্তানের সম্পর্কের মতো। যে শিক্ষক এইসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আসলে শিক্ষক হিসেবে আমরা বলতেও লজ্জা পাই। একজন শিক্ষকের এমন আচরণ হওয়াটা কেনদিনই আশা করা যায় না। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
এবিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অনতিলম্বে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত করা হোক। সে সঙ্গে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। একজন শিক্ষক যদি তার মেয়ের বয়সের শিক্ষার্থীর সাথে যদি এমন অশ্লীল কাজ করে তাহলে আজ শিক্ষাকদের অবস্থান কোথায়? আজ আমাদের গ্রামের স্কুল যে ঘটনাটি ঘটেছে খুবই লজ্জাজনক বিষয় বলে আমি মনে করি।
তবে আমরা এলাকাবাসী এই চরিত্রহীন শিক্ষককে স্কুল প্রাঙ্গণে দেখতে চাই না। তার মত শিক্ষক যদি স্কুলে থাকে তাহলে স্কুলের মানসম্মান থাকবে না। শিক্ষকের এমন কাজে আমরাও এখন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। তবে সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে এই দুশ্চরিত্র শিক্ষককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুক্তার আলীর বক্তব্য নিতে তার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকেই তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে কল রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। এবিষয়ে আমি অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি, তবে এবিষয় নিয়ে আমি প্রধান শিক্ষককে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে জরুরিভাবে যোগাযোগ করার জন্য বলছি।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল কুমার শর্মা বলেন, আমি স্কুলে আসার পরে জানতে পারলাম যে মুক্তার আলী নামের আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তিনি প্রতিনিয়ত নাকি পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিয়ে গিয়ে শ্রেণি কক্ষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল আচরণ করেন। অনেক সময় তিনি নাকি ছাত্রীদের গায়ে, গলায়, মুখে, বুকে, পেটে হাত দিতেন। এ বিষয়ে আমি এখনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে পারেনি তবে এই বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবো। তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন তাহলে সঠিক তদন্তের ভিত্তিকে তাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।