গোল্ডেন হক থেকে এমডি আবদুল্লাহ। সোমলি দুস্যদের অপহরের পর বেশ আলোচনায় ছিল। কিন্তু প্রায় ১ মাস কেটে গেলেও এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ২৩ নাবিককে। এক সময় মনে করা হচ্ছিল জোর করে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সেই শক্তি না থাকায় সে চেষ্টা বন্ধ রেখে মালিক পক্ষ সমঝোতার ভিত্তিতে নাবিকদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মেনে নেয়া হয়েছে সোমালি জলদস্যুদের দাবি করা অর্থ।
জানা যায়, সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিককে মুক্ত করতে পণের টাকা চূড়ান্ত হয়েছে। বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে দর কষাকষির পর এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। তবে ঠিক কত টাকা জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে জলদস্যুদের দেওয়া হবে তা প্রকাশ করা হয়নি।
মুক্তিপণ কোন প্রক্রিয়ায় দস্যুদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, এখন আলোচনা চলছে সেটি নিয়ে। এর পর ঠিক করা হবে কবে জিম্মি নাবিকরা মুক্তি পাবেন। ঈদের আগেই জিম্মি নাবিকদের মুক্তির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে রাখতে চাচ্ছে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ। সেভাবে কাজ করতে বীমা প্রতিষ্ঠানকে চাপও দিচ্ছে তারা। তবে জলদস্যুরা মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চাচ্ছে না। মূলত মালিকপক্ষকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখতে এমন কৌশলে এগোচ্ছে জলদস্যুরা। এদিকে মুক্তিপণ দিয়ে নাবিকদের মুক্ত করার বিষয়ে অগ্রগতির কথা স্বীকার করেছে কেএসআরএম গ্রুপ। তবে মুক্তিপণের অঙ্ক কত, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না তারা।
সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের অধিকাংশ নাবিকই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কাছে নেই ওষুধপত্র। পানির সংকট মারাত্মক হয়েছে। সপ্তাহে মাত্র দুয়েকবার স্বাদু পানি পেলেও বাকি সময় সমুদ্রের লোনা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জিম্মি নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে জাহাজ মালিকপক্ষ কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে দস্যুদের সঙ্গে কোনো একটা সমঝোতা হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। কেননা তাদের আচরণ নমনীয় হয়েছে। এখনো অনেক প্রক্রিয়া বাকি। প্রথমে সমঝোতা হবে। এরপর তাদের কথা অনুযায়ী মুক্তিপণের টাকা পৌঁছাতে হবে। টাকা পাওয়ার পর নাবিকদের মুক্তি মিলবে। নাবিকরা সেখান থেকে কোনো বন্দরে যাওয়ার পর জাহাজটিতে নাবিকদের নতুন সেটআপ দেওয়া হবে। এরপর বিমানযোগে তারা দেশে ফিরবেন। বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত এক মাস কিংবা আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যা শুনেছি, জিম্মি নাবিকদের ছাড়ানোর বিষয়ে দস্যুদের সঙ্গে জাহাজ মালিকের সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এখনো অনেক ধাপ বাকি আছে। মুক্তিপণের টাকা কীভাবে কোথায় কখন পৌঁছাবে সেটা ঠিক হবে।
মুক্তিপণ পৌঁছার পর নাবিকরা মুক্তি পাবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত দস্যুদের এলাকা থেকে জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমায় পৌঁছাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুক্ত সেটা বলা যাবে না। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে এক সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘সব নাবিক সুস্থ আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দস্যুদের সঙ্গে আমাদের আলোচনার অগ্রগতি আছে। আশা করছি, যেকোনো সময় নাবিকরা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবেন।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর।
এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার ও প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নামও পরিবর্তন করা হয়।