বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে অভিবাসী পাচারে জড়িত সন্দেহে দুটি মানবপাচারকারী নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ভেঙে দিয়েছে আলবেনিয়া। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আলবেনিয়ার বিশেষ কার্যালয়ের (স্পাক) বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ইতালির বার্তা সংস্থা আনসা।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের ইইউর বিভিন্ন দেশে পাচারে জড়িত সন্দেহে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন উদ্যোক্তা, তারা উৎপাদন খাতে কর্মরত। তাদের মধ্যে ৫৩ বছর বয়সী এক ইতালীয় নাগরিককে আলবেনিয়ার ভ্যালোনা শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, চক্রটি অভিবাসীদের বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পেতে সাহায্য করত। এরপর সেখান থেকে কাজের ভিসায় আলবেনিয়ায় নিয়ে আসত। তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর অভিবাসীদের সহায়তা করতে সীমান্ত পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তাকেও হাত করেছিল অপরাধী চক্রটি। দেশটির পুলিশের চার সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া দুই অপরাধী সংগঠনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের সময় পুলিশ কর্মকর্তারা অস্ত্র, জাল নথিসহ নগদ প্রায় ১০ লাখ ইউরো জব্দ করেছেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে কর্মরত আলবেনিয়ার বিশেষ দপ্তর (স্পাক) এই চক্র দুটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত শুরু করে। স্পাকের তদন্তকারীরা বিশেষ আদালতের বিচারকের সামনে বলেন, আলবেনিয়ায় বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আইন কাজে লাগিয়ে একটি অপরাধমূলক গোষ্ঠী সংগঠিত করেছিল অভিযুুক্তরা। এভাবে তারা মোট ২৫৩ জন বাংলাদেশিকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ডি ক্যাটাগরির কাজের ভিসায় আলবেনিয়ায় আসতে সহায়তা করে। এছাড়া ইরান ও পাকিস্তানের নাগরিকদেরও টার্গেট করেছিল তারা।
আদালতের বিচারক ফ্লোরা হাজরেদিনাজকে স্পাকের দুই তদন্তকারী এন্ড্রি সেতি এবং লুয়ান তাফাল্লা বলেন, চক্রটি ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল লিংক’ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তায় অভিবাসীদের গ্রাহক হিসেবে খুঁজে বের করত। পরবর্তীতে আন্তোনিও স্পেসিয়ন, জুলজেটা সিপা এবং আর্তুর মাতা নামের তিন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট বের করত। এছাড়া আরও বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ও হোটেল মালিক তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করত।
সবশেষ ভিসার জন্য যাবতীয় প্রশাসনিক নথি বের করতে নেটওয়ার্কটিকে সহায়তা করত সীমান্ত পুলিশের চার কর্মকর্তা। স্পাক বিভিন্ন নজরদারি ডিভাইস, ওয়্যারট্যাপিং এবং অন্যান্য তদন্তের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে।
তদন্তের এক পর্যায়ে, দুবাই হয়ে আলবেনিয়ায় কাজের ভিসায় আসা এক বাংলাদেশি যাত্রীর সাথে একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, অভিবাসীরা আলবেনিয়া কাজ না করে, আসার পরপরই ইইউর অন্য দেশের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করত।
অভিবাসীদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ হাজার ইউরো নিয়ে তাদের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অনিয়মিত পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করত এই অপরাধী চক্রটির সদস্যরা। তারা অভিবাসীদের পরবর্তী যাত্রার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতেও সহায়তা করেছিল।
এই চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে তিরানা বিমানবন্দরে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়ে অভিবাসীদের কসোভো সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হতো। কসোভো থেকে কাঙ্ক্ষিত ইইউ দেশে সংশ্লিষ্টরা তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচিত ‘বলকান রুট’ এর অন্যতম প্রধান দেশ আলবেনিয়া। এই রুট ব্যবহারকারী অভিবাসীদের বেশিরভাগই এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তবে এসব অভিবাসীর অনেকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য আলেবনিয়ায় আটক থাকেন। ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আলবেনিয়া কর্তৃপক্ষ ৯ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী শনাক্ত করেছিল।