চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে চলিতেছে সার্কাস…

চাচা-ভাস্তের বিরোধে আরেক প্রার্থীর ফায়দা লুটার চেষ্টা!

দিলীপ-টগরের মুখে কুলুপ, ২১ মে মিলবে সব হিসেব

দ্বিতীয় ধাপের ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২১ মে। তবে এই নির্বাচন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রার্থীদের মধ্যে কি হচ্ছে? দিনভর নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, আজিজুল হককে নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা এবং জল্পনা-কল্পনা চললেও হঠাৎ সেই আলোচনায় যোগ হয়েছে আরেক প্রার্থী আশাদুল হক বিশ্বাস। অনেকে বলছেন, চাচা-ভাস্তের লড়াই লড়াইয়ের মধ্যে আরেক প্রার্থীর যোগ-বিয়োগের খেলা এই নির্বাচনের মাঠকে রীতিমতো সার্কাসে পরিণত করছে। যদিও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সার্কাসের শুরুটা করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি নিজেকে সরিয়েও নিয়েছেন। তবে নিশ্চুপ থেকে প্রার্থীদের কদর পাচ্ছেন সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় আসা আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আলী আজগর টগর। তাই সবকিছুর উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।


জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এখন চুয়াডাঙ্গাতে অবস্থান করছেন না। তিনি ঢাকায় আছেন। কিন্তু এই উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে তার রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই বৈঠক করেছেন। প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন তিনি তার ভাস্তে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে সাপোর্ট দিয়ে মাঠে থাকবেন। কিন্তু সব হিসেব পালটে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি তার পক্ষের প্রার্থী হিসেবে কৃষক লীগ নেতা ও তার দীর্ঘদিনের সহচর আজিজুল হককে মনোনীত করেন। আর এই খবরেই সবাই চমকে উঠেন। তারপর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ এর অংগ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘোড়া প্রতীকের পরাজয় নিশ্চিতে গণসংযোগ, পথসভা ও নির্বাচনী সমাবেশ করে যাচ্ছেন আজিজুল হকের পক্ষে। আর এতেই ভোটে মাঠে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেই বলছেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্র্বাচন থেকে সরে থাকার নির্র্দেশনা দিয়েছেন বলেই এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার ভাস্তে নঈম জোয়ার্দ্দারকে সমর্থন না দিয়ে নিজের দীর্ঘদিনের সহচর আজিজুল হককে প্রার্থী করেছেন। আবার আরেক পক্ষ বলছেন- ভাস্তে নঈম জোয়ার্দ্দারের সাথে তার ছোট চাচা টোটন জোয়ার্দ্দারের দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে আজিজুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। কারণ ২০১৯ সালের ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নঈম জোয়ার্দ্দারের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তার ছোট চাচা টোটন জোয়ার্দ্দার প্রার্থী হোন। যারফলে সেবার চাচা-ভাস্তের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন আশাদুল হক বিশ^াস। তবে সব বিভেদভুলে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার তার চাচার সাথে মিলিত হোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে বেশ সাহায্য করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি নির্বাচিত হবার পরেই সব বিভেদভূলে চাচার কাছে আসা ভাস্তেকেই দিলেন সরিয়ে। যার ফলে পাল্টে গেল উপজেলা নির্বাচনের সব হিসেব। যদিও এবার হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার প্রথম থেকেই ভোটের মাঠে রয়েছেন। তবে তার পরিবারের বিমুখতায় দিন দিন হচ্ছেন কোনঠাসা। আর এদিকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সদর উপজেলা নির্বাচনের শূন্যে থাকা প্রার্থী আশাদুল হক বিশ্বাস হঠাৎ এসেছেন আলোচনায়। তিনি সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র জিপু চৌধুরীকে দলে ভিড়িয়ে গত ২০১৯ সালের নির্বাচনের মতোই ফায়দা নিতে নানা কর্মকৌশলে ব্যস্ত রয়েছেন বলেও নাম প্রকাশ না করে অনেকেই এ তথ্য জানান।


এদিকে, সরেজমিনে ঘুরে ভোটের হিসেব-নিকেশে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আশাদুল হক বিশ্বাসের পিছিয়ে থাকার তথ্য উঠে এসেছে। আর ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বরাবর এগিয়ে থাকলেও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হক তাতে বাধ সেধেছেন। সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের আজিজুল হকের পক্ষে অধিকতর সক্রিয়তা চাচা-ভাস্তের বিরোধ নতুন করে এনেছে সবার সামনে। কিন্তু নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারও থেমে নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, পথসভা ও নির্বাচনী সমাবেশে ব্যস্ত রাখছেন নিজেকে। তবে আজ থেকে আবার পাল্টাবে হিসেব। আনারস প্রতীকের প্রার্থী আশাদুল হক বিশ্বাসও আলোচিত-সমালোচিত নেতা জিপু চৌধুরীকে নিয়ে মাঠে নেমে চমক দেখানোর চেষ্টাই সাজাচ্ছেন রণকৌশল। কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় চুয়াডাঙ্গার রাজনীতি অঙ্গনের আরেক আলোচিত নেতা সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ভোটের মাঠের অস্পষ্ট অবস্থান। এখনো সাধারণ ভোটাররা বুঝতেই পারছেন না- দিলীপ কুমার আগরওয়ালা কিংবা তার নেতাকর্মীরা কোন প্রার্থীর পক্ষে। এনিয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সাথে কথা হলে, তিনি এবিষয়ে কোনো মন্তব্যই করতে রাজী হননি। তবে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে- সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের সব প্রার্থীই নাকি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন নিতে দৌড়ঝাঁপ-তদবীর অব্যাহত রেখেছেন। তবে এবিষয়ে কোনো প্রার্থীই বা তার পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নেতা কোনো মন্তব্য করেননি। আর এই নির্বাচনের মাঠে আরেক নেতা এম.এ রাজ্জাক খানের কোনো উচ্চবাচ্য দেখা যায়নি। এছাড়া তাকে নিয়ে কোনো প্রার্থীর মধ্যেও আগ্রহ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রতিবেদকের গোচরে আসেনি। আর এই ভোটের মাঠে এম.এ রাজ্জাক খানের কারো পক্ষ নেওয়া না নেওয়া! ভোটের হিসেবে কোনো প্রভাব ফেলবেনা বলেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন। এছাড়া সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদীয় এরিয়ায় হওয়ায়, এমপি আলী আজগর টগর এই ভোটের ম্যাকানিজমে সব প্রার্থীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। তবে এমপি টগরও দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মতো মুখে কুলুপ এটে নিশ্চুপ বসে আছেন। যার ফলে চাচা-ভাস্তের বিরোধ, আলোচিত-সমালোচিতদের নানা কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষ বলছেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে চলিতেছে সার্কাস।


উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়াম লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক প্রার্থী হয়ে লড়বেন। যদিও এ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নেই। এছাড়া বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এতে অংশ নিচ্ছে না। যার কারণে শুধু আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা এই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।