শাহ্ সুফী হযরত মাওলানা সোলাইমান শাহ্ চিশতী (রঃ) -এর মাজার শরীফ

গোলাপনগর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া ২৭, ২৮ ও ২৯শে চৈত্র ওরশ শুরু

আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ সোলাইমান শাহ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপ নগরে রয়েছে সোলাইমান শাহের মাজার। আধ্যাত্মিক সাধক সোলাইমান শাহের জীবন কর্মের জন্য তিনি আজও হাজারো ভক্তের মাঝে বেঁচে আছেন। তাইতো প্রতি বছর গোলাপনগরে লাখোভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোলাপ নগর।

পদ্মা নদীর কুলবর্তী ভক্তদের বসে ২ দিনব্যাপী মিলন মেলা। লাখো লাখো ভক্তের ভীড়ে মুখরিত হয় এলাকা। আধ্যাত্মিক ভাব-গান আর আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে মাজার প্রাঙ্গনের ভক্তরা। জানা যায়, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নির্জন এলাকা পদ্মা নদীর পশ্চিম তীরে সবুজ গাছপালায় ঘেরা চর গোলাপনগর এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষের পবিত্র সমাধি স্থল। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন লাখো ভক্তের হৃদয়ের প্রাণ পুরুষ মহান ব্যক্তিত্ব শাহ্ সুফী হযরত মাওলানা বাবা সোলাইমান শাহ্ চিশতী (রঃ)।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে তিনি এবং তিনার ৮ সহচর শহীদ হন। তারপর থেকেই উক্ত আশেকানরা এখানে গড়ে তোলে মাজার শরীফ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত-ভূটান ও পাকিস্তান থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রতি বছর ২৭, ২৮ ও ২৯শে চৈত্র ওরশ হয়। ওরশে লাখো নারী-পুরুষ সামিল হন।

ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্যেই ঊনবিংশ শতকে যে সকল মনীষী, আউলিয়া, গাউজ, কুতুব, দরবেশ, ফকির এই উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন হযরত সোলাইমান শাহ্ (রঃ) তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।

৬০ এর দশকে সোলেমান শাহ এসে পদ্মার নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থান নেন। সেখানে একটা খড়ের কুঁড়ে ঘরে থাকতেন। বাবা সোলেমান শাহ্ বরিশাল জেলার লোক ছিলেন বলে জানাগেছে। যৌবন আরম্ভ হলে তিনি গৃহ ত্যাগ করেন এবং ভারতের পশ্চিম বাংলার করিমপুর থানায় এবং খাজুরে বর্ডারে কিছুদিন বসবাস করেন। এখান থেকে রাজশাহীর চরেও কিছুকাল থাকেন। তারপর সেখান থেকে আসেন ভেড়ামারা ঘোষপাড়া গ্রামে সাতবাড়ীয়া মসজিদের উত্তরের মাঠে এক বাবলা গাছের নীচেও কিছু দিন থাকেন।

শেষে গোলাপনগরের পদ্মা নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকাল সময়ে পাক হানাদার বাহিনী পাকশী ঘাট পার হয়ে গোলাপনগরে প্রবেশ করে। সে সময় সোলেমান শাহ্ তার ৮জন মুরিদ ভক্তসহ কুঁড়ে ঘরে ছিলেন। পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে সোলেমান শাহ সহ ৮জন শহীদ হন। তিনি এবং সঙ্গীরা শহীদ হওয়ার পর থেকেই এখানে গড়ে উঠেছে পবিত্র মাজার শরীফ। মাজার শরীফে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখে ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। ওরশকে কেন্দ্র করে মাজার চত্বরে বসে বিভিন্ন রকমারী দোকান। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে সোলাইমান শাহের টানে ছুটে আসে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ।

এখানে আসলে মন প্রাণ পবিত্র হয়। আত্মার শান্তি পায় বলেও অনেকের বিশ্বাস।

কিভাবে যাবেনঃ-

কুষ্টিয়া হতে বাস, ট্রেন অথবা সিএনজি দিয়ে ভেড়ামারা আসতে হবে। ভেড়ামারা হতে গোলাপনগর সিএনজি, ভ্যান, টেম্পুর মাধ্যমে আসা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *